বাংলা নাটক থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, উৎপল দত্ত। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা পরিচালক, লেখক ও নাট্যকার। বাংলার গননাট্য আন্দোলনের তিনিই ছিলেন পুরোধা। প্রথমদিকে তাঁর বাংলা থিয়েটারে অভিনয় দিয়ে শুরু এবং পরবর্তীকালে আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের তিনিই হয়ে ঊঠেছিলেন এক অগ্রনী ব্যাক্তিত্ব, হয়ে ওঠেন মঞ্চের কারীগর। কৈশোর জীবনেই ইংরেজি থিয়েটারের প্রতি বেশ আগ্রহ তৈরী হয় উৎপল দত্তের। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কিছু বাংলা থিয়েটারে অভিনয় করলেও, তার পাশাপাশি অভিনয় করতেন ইংরেজি থিয়েটারেও।
১৯৪৭ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ইংরেজি থিয়েটারের জগতে পা রেখেছিলেন উৎপল দত্ত। নিকোলাই গোগোলের ‘ডায়মন্ড কাট্স ডায়মন্ড’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে উৎপলের নাট্য অভিনয়ের শুরু। তাঁর সহপাঠী অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন প্রতাপ রায়, অনিল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এই বন্ধুদের নিয়েই তিনি তৈরি করেন তাঁর প্রথম নাট্যদল ‘দি অ্যামেচার শেক্সপিরিয়নস’। তখন তাঁর বয়স মাত্র আঠেরো। তাঁর অভিনয়ে গুনমুগ্ধ হয়ে ঐ থিয়েটার গ্রুপের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, কালবিলম্ব না করে উৎপল দত্তের দলকে ভাড়া করেন এবং এই থিয়েটার দলটি দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের অভিনয় মঞ্চস্থ করতে থাকে। যদিও পরবর্তীকালে, এই দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘লিটল থিয়েটার গ্রুপ’। মূলত ইংরেজি নাটক মঞ্চস্থ হত, তবে পরবর্তীতে, তিনি ‘কল্লোল’, ‘অঙ্গার’ এবং ‘টিনের তলোয়ার’-এর মতো বাংলা নাটক মঞ্চস্থ করতে শুরু করেন। উৎপল দত্ত বাড়িতেও জার্মান, স্প্যানিশ এবং লাতিন ভাষায় কথা বলতেন।
সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব চলে এসেছিল একেবারে দোরগোড়ায়। উৎপল দত্তের দল যখন ‘ওথেলো’ পারফর্ম করছিলেন, তখন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মধু বসু তাঁর অভিনয় দেখতে এসেছিলেন। উৎপল দত্তের ‘ওথেলো’র ইন্টারপ্রিটেশনে মুগ্ধ হয়ে মধু বাবু, উৎপলবাবুকে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন অবলম্বনে, মুখ্য চরিত্রের প্রস্তাব দেন। এরপরই হিন্দি-বাংলা সুদীর্ঘ কেরিয়ার শুরু হয় উৎপল দত্তর। ১৯৭০ সালে ‘ভুবন সোম’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন শিল্পী। ‘গোলমাল’ ছবির জন্য উৎপল বাবু ফিল্মফেয়ারে সেরা কমেডিয়ান পুরস্কারে ভূষিত হন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিকে তিনি বারবার কুর্নিশ জানিয়েছেন। ‘স্যর’ বলে ডাকতেন সত্যজিৎকে রায়কে। আর সত্যজিৎ রায়ও কার্যত মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন উৎপল দত্তের অভিনয় দক্ষতায়। সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘উৎপল যদি রাজি না হত, তবে হয়তো আমি ‘আগন্তুক’ বানাতামই না।”